মোট পৃষ্ঠাদর্শন

Translate

মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

কুড়ি বয়স ভাবনাগ্রস্ত



বয়স প্রায় কুড়ি ছুয়ে ছুয়ে হয়ত আপনি মধ্যবিত্ততা নিয়ে চলছেন
জীবন নামের রেলগাড়িতে সবে মাত্র
আপনি যাত্রীদলে অন্তর্ভেদী হলেন
চারদিকস্থ বিলাসকানন এর ঘ্রাণে
আপনি কিছুটা বিভ্রম হয়ে
হাটতে গিয়ে পিচ্ছিল খাচ্ছেন
ভাবছেন ইদূর ললাট আপনার
কিন্ত কেন?
আপনার সৃষ্টিকরণ আর সের সৃষ্টিকরণ একই রুপ তবে অন্যরকমভাবে বলতে গেলে
আপনি কিন্ত ধরিত্রীর কাছে কৃতজ্ঞচিত্ত এই যে আপনি হাসি/কান্না দু'টি উপলব্ধিকৃত
জীবন পথে যাত্রা শুরুতে
আপনার উদাসীন হওয়ার কি আছে
আপনি এইটা ভাবেন কি যে
এক দিন আপনার ঘ্রাণশক্তি চর
ঐ বিলাসকানন থেকে বহুদূর যেতে চায়,,
তাই উফ সিট আর অন্যের কিছু নিয়ে আপনি গল্পজোট বাদ দিয়ে নিজের গল্প রচনা করেন,
সেত বেশ কিছু নয়,,

বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৬

আত্মনিষ্ঠ ইচ্ছে শক্তি কবি কামরুলের জীবন চলা


#জীবন-বৃত্তান্ত:
নামঃ মোঃ কামরুল ইসলাম।
পিতাঃ মৃত হোসাইন আহমদ।
মাতাঃ মোছাঃ আফিয়া খাতুন।
তিন ভাইয়ের মধ্যে আমি দ্বিতীয়।
গ্রামঃ গুয়ালজুর।
উপজেলাঃ কানাইঘাট।
জেলাঃ সিলেট।
শিক্ষাঃ HSC-  গাছবাড়ি আইডিয়্যাল কলেজ।
----
♦কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা -
আমাদের এলাকায় ২০১০ সালে
একটা ম্যাগাজিন বের করে একটা
সংস্থা। আমি ওটাতে একটা লেখা
সংগ্রহ করে দেই, কিন্তু দেখা গেলো
তারা ম্যাগাজিনে লেখা ছাপেনি।
তাই পরিশেষে একটা পরম ধ্যান
ধারণা মাথায় খেলে গেলো!
যে- আমি নিজে থেকে প্রকাশিত হব।
যাতে নিজস্ব গ্রন্থ প্রকাশ করা যায়।
এই জেদ ও আবেগ আকাঙ্ক্ষা আমাকে
কবিতা রচনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল।
প্রভুর কৃপার ফলে আমি কবিতা
লিখে চলেছি সেই থেকে অবিরাম।
তবে এই চর্চাতে উৎসাহ-উদ্দীপনা
এসেছে আমার বন্ধু-বান্ধব, গুরুজন,
ও আত্মীয়স্বজনদের প্রশংসা ও
প্রেরণায়। সত্যিকারের বন্দনা
মানুষকে উজ্জীবিত করে রাখে চিরায়ত।


তার বাছাই করা একটি কবিতা
।।জাগরে দেশ।।
#কামরুল_ইসলাম
আমার মাতৃভূমি,
থেকনা আর ঘুমি!
নিদ্রা টুটি জাগো,
চির কল্যাণ মাগো!
আলসেমী ছাড়িয়ে,
হাত-পদ নাড়িয়ে!
সচল করি ভাগ্য দেশ,
মিটে যাবে বিষাদ-ক্লেশ।
মাথায় বীর তাজ পরি,
যথার্থ হই সর্বোপরি!!
মুছে দেব সর্ব গ্লানি,
হবে তবে গর্ব জানি।
দল কমিয়ে, জমিয়ে তুলি,
বিভেদ বিদ্বেষ মন হতে যাই ভুলি।
----------
♦ভবিষ্যৎ ভাবনা%%
কবিতা আমার ধ্যানে ধারণাতে
,ভাবনাতে, স্বপনে, বাস্তবে এ ভুবনে
আনন্দের সাথে বাঁচার একমাত্র
সজীব-সখা!! আমি কবিতাকে
ভালবাসি সর্বান্তঃকরণে, সমস্ত
দিল দিয়ে। এতে দেখি আশার
দীপ্ত আলো, বেদনা ভুলার মাধ্যম
ও স্বপন সাম্রাজ্য গড়ার একমাত্র
দারুন হাতিয়ার। জনতার আবেগ,
আশা, স্বপ্ন, ব্যর্থতা, বেদনা, অব্যক্ত
বাণী সব চিত্রিত করা যায় এ কবিতায়।
তাই কবিতা আমার সাথে জনতার
সখ্যতার প্রধান মাধ্যম।আমি কবিতায়
মানুষের কথা বলতে চাই সদাই,
কবিতা দিয়ে দেশ সাজাবার স্বপ্ন
দেখি!! কবিতার জয়গান হোক
এ কোমল কামনা।।




বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬

সাফল্যনীতি,,,


সাফল্যের কথাকলি না শুনে
পরিশ্রমী হলে সাফল্য তোমার পিছনে পিছনে ঘুরবে,,,
মনে কর তুমি আজ নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছো
ইচ্ছে করছে তুমি নদীর ওপারে যাবে তুমি কত ইতিহাস শুনেছ যে বাঘ যখন নদী পার হতে চায় তখন সে চায় যতই স্রোত থাক সে সোজা নদী পার হবেই, কিন্তু বাঘ সোজাসুজি নদী পার হওয়ার জন্য একের পর এক
চেষ্টা চালিয়ে যায়, অবশেষে সে পার হলেও কিছু বাঁকাভাবে চলে যায়, মানুষের জীবনপথ একইধরন,
শৈশবকালে মানুষ বৃহত্তর সপত্নীক,,
কৈশোরকাল কেটে যায় পরিশ্রমসহকারে,,
যৌবনে  কিছুনা হলেও পূরণ হয় সপ্ন,,,
এভাবে চলে জীবন,,,
তবে এতটুকু অর্জনেও কত প্রচেষ্টা,
কত আয়োজন, কত বিয়োজন,
সবই প্রত্নরূপ,,,,,,

শনিবার, ২৮ মে, ২০১৬

"আত্মনিষ্ঠ -ই শ্রেষ্ঠ অর্জন "-


দিলদার হোসাইন মাসুম


আমি মনে করি একজন মানুষের জীবনে সফল
হওয়ার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় অন্তরায় হলো তার
নেতিবাচক মনোভাব, অত্যাধিক ভয় ও আত্নদ্বন্দ।
কারো প্রতিভা থাকলেই যে সে সফল হবে তা
ঠিক নয় বরং আমরা সবাই সবাই সহজাত গুন
সম্পন্ন,, তা সত্ত্বেও যে জিনিসটি আমাদের
পিছিয়ে দেয় তা হল, নিজেকে নেতিবাচক
দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করা। ভয় খুব বেশী হলে প্রতিভা
চাপা পড়ে যায়। বাস্তব জগতে অনেক সময়ই
**যে বুদ্ধিমান সে এগিয়ে যায় না, তবে যে
সাহসী ও আত্নবিশ্বাসী সে অবশ্যই এগিয়ে
যায়** প্রমানিত।

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬

সময়ের মূল্য অসীম

দেলওয়ার হোসাইন সেলিম



প্রিয় ভাইয়েরা সময় থাকতে ক্যারিয়ার গঠনে মন দাও।ছাত্রত্ব শেষে বিএস ক্যাডার বা প্রজাতন্ত্রের একজন যোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে প্রজাতন্ত্রের যেমন সেবা করতে পারবেন ঠিক তেমনি স্বীয় আদর্শও বাস্তবায়ন করতে পারবেন।যেভাবে সবাই উদ্দেশ্যহীন আর অন্যকে চুর থেকে নেতা,নেতা থেকে অভিনেতা বানানোর রাজনীতিতে ব্যস্ত আছেন,অন্যদিকে আপনাদের প্রতিপক্ষের বন্ধুরা প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আসনগুলা নিজেদের করে নিচ্ছে অন্তত ৩৫ বছরের জন্যে।আসুন একটু নিজেকে সময় দেই,নিজেকে সময় দিলেই বাকিদের সময় দেয়া কোন ব্যপার না।
আর দল?যোগ্যতা থাকলে দলই একদিন আমাদের খোঁজে বের করবে,যেমন বের করেছিল শ্রদ্ধেয় শাহ এম এস কিবরিয়া স্যার বা প্রফেসর আনিসুজ্জামান স্যারদের।আল্লাহ আমাদের সবার মঙ্গল করুন।ধন্যবাদ সবাইকে।

বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০১৬

"ছোট লোক"-এর বড় জয়,

সুশান্ত পাল

আপনার অফিসে যে লোকটি ঝাড়ু দেন, যাকে দেখলেই আপনার মনে হতে থাকে, এমনিতেই একটা বকা দিয়ে দিলেও কী-ই বা হবে, নিজের বাসার কোনো রাগ কিংবা ব্যক্তিগত ক্ষোভ ঝাড়ার সবচাইতে নিরাপদ স্থানটি ভেবে যাকে মুখে যা-ই আসে, তা-ই বলে ফেলা যায় ভাবেন, কখনো কখনো গায়ে হাত তুলতে ইচ্ছে করলে যার গায়ে হাত তোলাটা নিজের অধিকারের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, যার বাবা-মা তুলে গালাগালি করে নিজের অসুস্থ মানসিকতাটা সামনে নিয়ে এলেও কিচ্ছু হয় না, যিনি আপনার সব অন্যায় কথাগুলি শোনাকে উনার চাকরির একটা অংশ মনে করেন, যাকে তুইতোকারি করা যায় বিনা অস্বস্তিতেই, নিজের জুতোজোড়াও সরিয়ে রাখতে যাকে হাঁক দিয়ে বলেন জোরেই, যার অসহায়ত্ব দেখলে আপনার কদর্য পৌরুষ সুড়সুড়ি পেয়ে নাচতে থাকে, উনিও কিন্তু একটা পরিবারের সর্বময় কর্তা। আপনি স্রেফ একটা তুড়িতেই উনার চাকরিটা ‘খেয়ে ফেলতে’ পারেন বলে উনি আপনার সামনে নত হয়ে সব অবিচারগুলিকেও সহ্য করে। কণ্ঠস্বরটাও যথাসম্ভব নামিয়ে কথা বলেন, কারণ স্বাভাবিক কণ্ঠস্বরকে বেয়াদবি ভেবে বসে আপনি চাইলেই সবকিছু করতে পারেন। সে ভয়ে উনি হাসিমুখে বিনা বাক্যব্যয়ে যা-ই বলেন না কেন, মেনে নেন, এমনভাবেই, যেন মন থেকেই নিয়েছেন! এটা শ্রদ্ধা নয়, ভালোবাসা নয়, এটা স্রেফ ভয়। চুপ করে থাকা মানেই কিন্তু মন থেকে গ্রহণ করা নয়। প্রতিবাদের অনুপস্থিতি মানেই ন্যায্যতা নয়। শরীরের শক্তির নির্লজ্জ প্রকাশে মনের নাজুকতাই ফুটে ওঠে। এই পৃথিবীতে সবচাইতে দুর্বল চিত্তের মানুষগুলোকেই অন্যের গায়ে হাত তুলতে হয়। মানুষ যখন তার নিজের অবস্থানের অযোগ্য হয়, তখনই নিজের অবস্থানের সুযোগ গ্রহণ করে অন্যকে আঘাত করে। বড় অবস্থানের ছোটলোকমাত্রই ভয়ংকর!
আপনার অফিসের সেই ঝাড়ুদারের কথায় ফিরে যাই। সেই উনি যখন সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন একটা সস্তা লজেন্স হাতে নিয়ে, উনার পুতুলের মতন আদুরে ছোট্ট মেয়েটি তখন খুশিতে উনার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর উনার চুলগুলি সরিয়ে দেয়, কপালে, চোখে, গালে চুমু খায়, আর লজেন্সটা চুষতে চুষতে বলতে থাকে, “আব্বু, তুমি অনেক ভাল!” বাবার সেই মুহূর্তে মনে হতে থাকে, এর চাইতে দামি সার্টিফিকেট পৃথিবীর সেরা ভার্সিটিতেও মেলে না। সারাদিনে কী কী হল, ওকে কে কী কী বলেছে, বন্ধুদের সাথে কী কী খেলল, আম্মু কখন কখন বকা দিয়েছে, একে একে সব বলতে থাকে। উনার স্ত্রী তখন একটু দূর থেকে বাপবেটির এসব খুনসুটি দেখতে থাকেন আর মুচকি হেসে ভাবেন, “এর চাইতে সুন্দর দৃশ্য কে কবে কোথায় দেখেছে?” সবচাইতে দরিদ্র অবহেলিত মানুষটিও কোনো এক নারীর চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পুরুষ, কোনো একটি শিশুর বিশ্বাসে পৃথিবীর সেরা পিতা। সেই পুরুষটি এরপর স্ত্রীর খোঁপায় হয়তো পরিয়ে দেন দিনের শেষে সস্তায় বিক্রি-হওয়া একটা ফিকে হয়েওঠা গোলাপ। স্ত্রীর মুগ্ধতার কাছে ওটাই পৃথিবীর সবচাইতে দামি উপহার! সেইদিন স্বামীর ঘামেভেজা চপচপে শার্টটির গন্ধ সেই গোলাপটির সুবাসের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে মুহূর্তেই। লাজুক চাহনিতে সেই প্রথম দিনের মতো করে স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকে। হাতমুখ ধোয়ার জলটাও এগিয়ে দেয় স্বামীর সেবায়। ধুয়ে এলে তিনজন একসাথে বাসার বাইরে এক চিলতে উঠোনে বসে সর্ষের তেলেমাখা মুড়ি খেতে খেতে চাঁদের আলোয় স্নান করে নেয়। মেয়েটি দুইজনের চারপাশে ঘুরে ঘুরে লাফাতে থাকে, কী কীসব ছড়া কাটতে কাটতে খিলখিল শব্দে হাসতে থাকে, খেলতে থাকে। সে দৃশ্য দেখে বউ যখন হাসতেই থাকে, হাসতেই থাকে, তখন হঠাৎই খেয়াল করে ওর চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে স্বামী হাসছেন মিটিমিটি, এ দেখে এই এতদিন পরও বউটি ভীষণ লজ্জা পেয়ে আঁচলে মুখ ঢাকে। “কী করেন? মেয়ে দেখছে তো!” হাহাহোহো করে হেসে বউয়ের আরও পাশ ঘেঁষে বসে স্বামীটি কর্কশ ধেড়ে গলায় একটা গান ধরে। সে গানটিকে ওইসময়ে মনে হয়, পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর মোহনীয় সংগীত। সেই আশ্চর্য সংগীতের মূর্ছনা চারপাশকে ছাপিয়ে যায়। মেয়েকে বাবা যে ছবির বইটি কিনে দিয়েছেন, সেটা থেকে কী কী সব ছবি এঁকে বাবাকে দেখায়, আর বাবা বলে, “বাব্বাহ্! অনেক সুন্দর হয়েছে তো!” স্ত্রী ভাবেন, মেয়েকে দেয়া ওইটুকু বাব্বাহ্! শোনার জন্যও বেঁচে থাকা যায়। একদিন আমার মেয়েও বড়ঘরের মানুষের মেয়েদের মতন বড় হবে। রাজ্যের স্বপ্ন এসে নামে চোখের পাতায়। একটাসময়ে গল্পে আর গানে ঝিঁঝিঁর ডাকে আর জোনাকিদের আলোয় প্রাচীন রাতের নৈঃশব্দ্য ভর করে।
উনি যখন খেতে বসেন তখন স্ত্রী পাশে বসে তরকারি বেড়ে দেন, সম্মুখভাগের গেলাপহীন টেবিল ফ্যানটা স্বামীর কাছাকাছি রাখেন। মেয়েটি সারাদিন অপেক্ষা করে ছিল কখন বাবা আসবে, বাবা কোলে বসিয়ে চারটে ভাত খাইয়ে দেবে, মজার মজার গল্প শোনাবে। সেদিন পাতে একটু শাক, ডাল আর সবজি ছাড়া হয়তো আর কিছুই জোটেনি, কিন্তু ওটা নিয়েই ওদের ছোট্ট স্বর্গের রাজভোজ চলে। স্ত্রীকে যখন এক লোকমা তুলে খাইয়ে দেন, তখন ছোট্ট পরীটিও গোলগোল নাদুসনুদুস হাত দুটো মুখের দুইদিকে ছড়িয়ে দিয়ে ফিক করে হেসে ফেলে! স্ত্রীকে খাইয়ে দিয়ে তার সে কী সুখ! এক লোকমা মুখে তুলে দেয়ার পর ঠোঁটের নিচে যে দুএকটি ভাত আটকে থাকে, সেটিও পরম যত্নে আস্তে আস্তে হাত দিয়ে সরিয়ে নেন। পরের লোকমা মুখে তুলে দেয়ার সময় থুতনির নিচে বাম হাতটা রাখেন, যাতে ভাত বাইরে না পড়ে। মেয়ে সামনে আছে, তাই স্ত্রীকে কোলে নিয়ে খাইয়ে দেয়া যায় না, কিন্তু সমস্ত অনুভূতি আর আদর দিয়ে মাথায় হাতটা বোলাতে বোলাতে পরম তৃপ্তিতে স্ত্রীকে খাইয়ে দেন। ভালোবাসার মানুষটি মেয়েদের আদর করে মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দিলে ওতে মেয়েরা যতটা খুশি হয়, আর কোনোকিছুতেই এর কণামাত্রও খুশি হয় না। এই শিল্পের কাছে পৃথিবীর সবচাইতে দামি উপহারটিও হার মানে। স্ত্রী ভাবে, শুধু এই ক্ষণটার জন্যও তো সারাজীবন ধরে প্রতীক্ষা করে থাকা যায়! ছোট ছোট সুখগুলিতেই জীবনের সমস্ত অর্থ লুকিয়ে আছে। এসব সুখের জন্যই স্বামীর ঘরের বাইরে থেকে ফেরার মুহূর্তটি সব মেয়ের কাছেই দিনের সবচাইতে দামি মুহূর্ত। মেয়েটি কখনো তুলতুলে নরোম হাতে কয়েকটি ভাত এলোমেলো করে তুলে নিয়ে বাবার মুখের কাছে ধরে, মায়ের মুখের কাছে ধরে। ওইটুকুন খাবারের স্বাদের কাছে বিশ্বের সেরা রাঁধুনির হাতের রান্নাও হার মানতে বাধ্য! সারাদিনের খাটুনি, ক্লান্তি, অথচ স্ত্রী আর কন্যাকে ভাত মেখে খাইয়ে দিচ্ছেন হাসিমুখে, ওতে ক্লান্তির ছাপটুকুও নেই। ওদের চোখে উনি পৃথিবীর সবচাইতে সম্মানিত মানুষ। স্ত্রী উনার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অবাক হয়ে ভাবেন, “মানুষ এতো সুন্দরও হয়! জীবনে এতো রং কেন?” ছোট্ট মেয়েটি বাবার দিকে মোলায়েম চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে, “আমার কোনো বন্ধুর এতো ভাল বাবা নেই।” প্রত্যেকটি মেয়েরই একজন সেরা বাবা থাকেন। সেই ঝাড়ুদারটি ভাবেন, “এর চাইতে বেশি সুখও হয়?” যার কোথাও কোনো সম্মান নেই, তিনিও কোনো না কোনো জায়গায় অনেক সম্মানিত একজন মানুষ।
যারা আপনার অধীনে একেবারেই ছোট চাকরি করেন, তাদের দিকে কখনো ভালোবাসার চোখে তাকিয়ে দেখেছেন, কেমন দারুণ লাগে? কখনো নিয়ে দেখেছেন তার এবং তার পরিবারের সুস্থতার খোঁজ? উনার কেন মনখারাপ, একথা জিজ্ঞেস করেছেন কখনো? কখনো তার ছোট ছেলে কিংবা মেয়েটির জন্য একটা ক্যাডবেরি কিনে দিয়ে দেখেছেন কতটা কৃতজ্ঞতাভরে উনি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকেন? আর কিছু নয়, কাজের ব্যস্ততার একফাঁকে আপনার রুমে ডেকে একটু হাসিমুখে গল্প করুন না ৫ মিনিট? ছোট অবস্থানের মানুষের সাথে গল্প করলে জাত যায় না। দেখবেন, ওর চোখজোড়া চকচক করছে! বাসায় ফিরে স্ত্রীকে, ছেলেমেয়েকে আপনার গল্প করবে। অনেক অনেক প্রার্থনা করবে আপনার জন্য। আমি বিশ্বাস করি, বড়লোকদের দোয়া কাজে লাগুক আর না লাগুক, গরীবদের দোয়া কাজে লাগে। সত্যিই খুব কাজে লাগে। অবস্থানের সুবিধা নিয়ে কারোর সাথে অন্যায় করলে সে অন্যায়ের শাস্তি অনিবার্য। নিচু অবস্থানের কারোর সাথে ভাল ব্যবহার করলে, উনার কাজের মূল্যায়ন করলে, উনার কাজের যে পরিধি সেটির মধ্যে উনার প্রাপ্য ক্ষমতাটুকু দিলে উনারা অনেক সন্তুষ্টিতে থাকেন। ওরা তো খুব অল্পতেই ভীষণ খুশি হয়ে ওঠে। আপনাকে মন থেকেই ভালোবাসবে, শ্রদ্ধা করবে, এমনকি নিজের জীবনটা দিয়ে দিতেও প্রস্তুত থাকবে। আপনার সম্পর্কে কে কী ভাবে, বলাবলি করে, ওদের কাছ থেকে জেনে যাবেন, নিজেকে শুধরে নিতে পারবেন। আপনার খোঁজখবর রাখবে চাকরির অংশ হিসেবে নয়, একেবারে মন থেকেই। যিনি আপনার অফিসে প্রতিদিন রান্না করে দেন, তাকে কখনো রুমে ডেকে একটা ধন্যবাদ দিয়েছেন? একদিন দিয়েই দেখুন না, পরেরদিনের রান্নাটা আরও ভাল হবে। ভাবতে পারেন, এতে যদি ওরা স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে? কাজে ফাঁকি দেয়? আমি দেখেছি, হয় না। ওরা কাজ করে ভালোবাসা থেকে, খুশিমনে, ভয়ে নয়। ভালোবাসার শাসনের চাইতে ভয়াবহ শাসন আর হয় না। যদি একবার হৃদয় দিয়ে ওটা করতে পারেন, তবে আপনার কাজের টেনশন অনেকটাই কমে যাবে। ওদের দায়বদ্ধতার জায়গাটিতে আঘাত করুন ভালোবাসা দিয়ে, হৃদয়ের সমস্ত উষ্ণতা দিয়ে, আইনবিধি দিয়ে নয়। দেখবেন, ওরা সংকোচে আর লজ্জায় ফাঁকি দেবে না। আপনার সম্মানের দিকটা মাথায় রেখে নিজেরা এমনকিছু করবে না যেটাতে আপনি অসম্মানিত হন।
জীবনে সফল হওয়ার চাইতে অনেকবেশি প্রয়োজন শান্তিতে থাকা। একজন সফল মানুষের চাইতে একজন ভালোমানুষ অনেকবেশি শান্তিতে থাকতে পারে। আপনি যদি আপনার অফিসে যারা ছোট কাজ করে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন, তবে এর শাস্তি পাবেন বিধাতার কাছ থেকেই। প্রকৃতিতে এসবক্ষেত্রে ন্যাচারাল জাস্টিস কাজ করে। আপনি দেখবেন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সুখশান্তির দিক দিয়ে ওদেরকে বিধাতা পুরস্কৃত করছেন। দিনের সাফল্যের চাইতে রাতের শান্তির দাম অনেক বেশি। যে মানুষ জেগে থাকতে অন্যদের ঘুম হারাম করে দেয়, সে মানুষ ঘুমানোর সময় স্বস্তিতে ঘুমাতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক। একজন সফল মানুষ নিশ্চয়ই একজন সফল পিতা, সফল স্বামী। যে বাবা তার সন্তানের শৈশবের সাথী হন না, তিনি প্রতি মুহূর্তেই তার বাবার শিক্ষাকে অসম্মান করেন। যে স্বামী তার স্ত্রীর প্রাপ্য ভালোবাসাটুকু থেকে স্ত্রীকে বঞ্চিত করেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে তার মায়ের অবস্থানকে ছোট করে ফেলেন। অর্থ ও অবস্থানের বিচারে সাফল্য মাপা যেতে পারে, সার্থকতা নয়। এক জন্মের সার্থকতা একশো জন্মের সাফল্যের চাইতেও অনেক বড়।
পুনশ্চ। দ্বিতীয় প্যারার দ্বিতীয় বাক্যে যে ব্যক্তির কথা বলসি, উনার মাথায় চুল না থাকলে উনার চকচকে টাকে উনার ছোট্ট মেয়েটি চুমু খায় ধরে নিতে হবে। :3